কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি.
জেলার হাওরাঞ্চল অষ্টগ্রামে বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর সেচস্কীমের বিপুল ভোটে নির্বাচিত ম্যানেজারকে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় সরিয়ে অনির্বাচিত ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়ায় ওই এলাকার কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমনকি এ নিয়োগের ফলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলারও চরম অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, অষ্টগ্রামের বাহাদুরপুর বৃহত্তর সেচস্কীমের পরিচালনার জন্য তিন বছরের জন্য ম্যানেজার নিয়োগের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর স্থানীয় কাস্তল কেবি মডেল হাইস্কুলে কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে এক নির্বাচনের আয়োজন করে স্থানীয় প্রশাসন। এতে ম্যানেজার পদে দুইজন প্রার্থী যথাক্রমে মোঃ সাফায়েতুল আলম খান পুটন ও গোলাম কিবরিয়া কল্লোল প্রতিদ্বন্ধি¦তা করেন। কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদীর ১১৭৬ কৃষক প্রতিনিধি ভোটারের মধ্যে ৭৪৫ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মোঃ সাফায়াতুল আলম খান পুটন বিপুল ভোটের ব্যবধানে ৪৩৪ ভোট পেয়ে ম্যানেজার পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু একবছর যেতে না যেতেই কোনো কারণ ছাড়াই অষ্টগ্রাম উপজেলা সেচ কমিটি তাকে সরিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় অষ্টগ্রামের বাহাদুরপুর বৃহত্তর ১২.৫ কিউ: সেচস্কীমের ম্যানেজার হিসেবে জনৈক একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া ও মারুফ নামে দুইজনকে ২০২৪-২৫ মেয়াদে ১৩ নভেম্বর বিএডিসি অষ্টগ্রাম এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তারা মিয়া স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে নিয়োগ দেন। যদিও তা নোটিশ বোর্ডে টাংঙিয়ে প্রকাশ করা হয় গতকাল বুধবার (২০ নভেম্বর)।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই এ প্রহসনের নিয়োগকে অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে নির্বাচিত ম্যানেজার মোঃ সাফায়েতুল আলম খান পুটন সাংবাদিকদের জানান, আমি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত ম্যানেজার। কোন কারণ ছাড়া আমাকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা সেচ কমিটির নেই। বোরো মৌসুম সন্নিকটে। দুই হাজার একর বোরো জমিতে সেচ প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এখানে আমার বিশাল অঙ্কের ইনভেস্ট রয়েছে। তাছাড়া, আমার কোনো অপরাধ নেই । থেকে থাকলে কমিটি আমাকে শোকজ করবেন, আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবেন। তারপরও সন্তুষ্ট না হলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আমাকে অব্যাহতি দিয়ে পূণরায় নির্বাচনের মাধ্যমে ম্যানেজার নিয়োগ দেবেন কমিটি। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের দুইজনকে ম্যানেজার নিয়োগ দেবেন, সেটা সাধারণ কৃষকেরা মেনে নেবেন না। এ নিয়ে যদি অপ্রিতিকর কোনো ঘটনা ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়, তাহলে এর দায়দায়িত্ব সেচ কমিটিকেই নিতে হবে।
এ ব্যাপারে সেচ কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলশান জাহান সাংবাদিকদের বলেন, সাফায়েতুল আলম খান পুটনের বিরুদ্ধ মামলা রয়েছে। সুতরাং কোন মামলার আসামিকে আমরা সেচস্কীমের দায়িত্বে রাখতে পারি না। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তারা মিয়াকে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায় নি।
এ ব্যাপারে অষ্টগ্রামের কাস্তল ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আবদুল মোমেন ভূঁইয়া বলেন, সাফায়েতুল আলম খান পুটন একজন উচ্চ শিক্ষিত সৎ জনপ্রিয় কৃষিবান্ধব ব্যক্তি। তাঁর ধারা আমরা উপকৃত এবং তার বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। নতুন সিদ্ধান্ত বাতিল করে সাফায়েতুল আলম খান পুটনকে বহাল রাখার দাবী জানাই ।
বাহাদুরপুর এলাকার কৃষক এনায়েত খান বলেন, আমাদের ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিকে এক কলমের খোঁচায় বাদ দিয়ে কমিটির পছন্দের ব্যক্তিদের ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা অযৌক্তিক ও বেআইনি। আমরা পুটনকে পূর্নবহালের দাবি জানাচ্ছি।