তোলপাড় ডেস্ক :
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা খুলনায় ডুমুরিয়া উপজেলার ময়নাপুর গ্রামে রয়েছে এমন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন মাত্র একজন। ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের স্কুলটিতে একমাত্র শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলটিতে শিক্ষকের সংখ্যা তিনজন। সেখানে নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেনা কলকাকলি। স্কুলটির এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। টিনের চালে জঙ ধরে গেছে।
অথচ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক চিত্র যেমন হওয়ার কথা, সকালবেলা অ্যাসেম্বলিতে লাইন দিয়ে দাঁড়ানো থাকবে বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থী। জাতীয় সঙ্গীত শেষে সবাই যার যার শ্রেণীকক্ষে চলে যাবে। রোল কল হবে, পাঠদান শুরু হলে শোনা যাবে শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দ। আর স্কুল শেষে ছুটির ঘণ্টা বাজলেই হৈ হৈ করে দৌড়ে বের হবে শিক্ষার্থীরা।
ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রানী বলছিলেন, সব কিছুই অন্য সব স্কুলের মতো হয়। ক্লাস, অ্যাসেম্বলি, স্কুলে ক্লাস শেষে ঘণ্টা বাজে। কিন্তু আমাদের একটা মাত্র বাচ্চা। একজন মাত্র ছাত্র নিয়ে কি করা যায় বলুন? আমরা তাকে পাশে বসিয়ে মায়ের মতো পড়াই।
একমাত্র এই শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলটিতে আলাদা একটি কক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর তিনটি বিষয়। বাংলা, গণিত, ইংরেজি তিনজন শিক্ষক ভাগ করে পড়ান।
স্বপ্না রানী বলেন, সে মোটামুটি ভালো ছাত্র। কিন্তু একটা স্কুলে স্টুডেন্ট না থাকলে কী রকম হয় বলেন? মনে হয় যেন ফাঁকা, কোনো প্রাণ নেই। মনের দিক থেকে আমার মানতে ইচ্ছা করে না।
তিনি জানান, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তিযোগ্য আরো চারজন শিশু রয়েছে কিন্তু তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র না থাকায় স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। ভর্তি না হলেও তাদের স্কুলে আসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু এই স্কুলটির এমন হাল কিভাবে হলো তার পেছনে রয়েছে অন্য আরেক কারণ। আর তা হলো গত কয়েক বছর ধরেই গ্রামটিতে শিশু জন্মের হার কম। তাই প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার বয়সী শিশু নেই।
ময়নাপুর গ্রামের বাসিন্দা তাপস কুমার মণ্ডলের দেয়া ৩৭ শতক জমির ওপর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৯১ সালে এবং এক সময় স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ হয়েছে।
মণ্ডল বলেন, ময়নাপুর গ্রাম হাওড়ের মধ্যে একটি দ্বীপ, চারিদিকে পানি। এখানে ৪৬টি পরিবারের বসবাস। এক সময় ৬০ জনের মতো ছেলেমেয়ে ছিল যাদের সবাই বড় হয়ে মাধ্যমিকে চলে গেছে। গ্রামটিতে গত চার বছরে পাঁচটি মাত্র নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। তারা কেউই এখনো স্কুলে ভর্তির যোগ্য নয়।
গ্রামটিতে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাস। তাদের মধ্যে থেকে ১৮টি পরিবার ভারতে চলে গেছে। যে পরিবারগুলো রয়ে গেছে তাদের অধিকাংশের একটি করে সন্তান। তাদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের ছেলে-মেয়ে আর নেই। এখানে বাচ্চা নেয়ার হার কম। বছরে একটা করে বাচ্চা জন্ম হলে তারা বড় হবে তারপর না স্কুলে আসবে।