কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ★
দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৫ শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি মো. শরিফুল আলম ও সাধারন সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। মো. শরীফুল আলম (আনারস) প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৫শত ২২ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধি রুহুল হোসাইন (ছাতা) প্রতীকে পেয়েছেন ১শত ৯৭ ভোট। মো. মাজহারুল ইসলাম (রিকসা) প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ১ শত ৫৯ ভোট, খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল (ফুটবল) প্রতীকে পেয়েছেন ৬শত ১১ ভোট।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় সম্মেলনের জেলা শহরের পুরান স্টেডিয়ামে শুরু হয় প্রথম অধিবেশন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম।
বেলা ১১টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্যে তিনি বলেন দলীয় নেতা কর্মীদের কেউ যেন ব্যক্তি সার্থে বিএনপিকে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। তারেক রহমান অদৃশ্যশক্তি ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি উড়ে এসে জুড়ে বসেনি, লড়াই সংগ্রা’ম করে এতদূর এসেছে। অতীতে যারা গুম,খুন করে বিএনপি ভাংতে চেয়েছিলো তারাই পালিয়েছে,আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। এটা আমাদের গর্ব। শহীদ জিয়া সেই ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য আলাদা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ্ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ এম রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুন ও আরেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ।
কিশোরগঞ্জে বিএনপির সম্মেলন ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ কারা পাচ্ছেন? তা নিয়ে দিনভর চলছিল নানা গুঞ্জন। শহরের জুড়ে ছিল প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের ছবি সংবলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন। দুই শতাধিকের ওপরে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। বিশাল মঞ্চের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার বর্গফুটের অস্থায়ী ছাউনি। সম্মেলন ঘিরে দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে ছিল বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনা।
এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মো. শরীফুল আলম। তাকে প্রতীক দেওয়া হয়েছিল ‘আনারস’। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন। তার সঙ্গে ‘ছাতা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলে বর্তমান জেলা কমিটির সহ সভাপতি রুহুল হোসাইন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম (রিকশা), কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল (ফুটবল), নিকলী উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল আলম রাজন (মাছ) ও নিকলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সাজ্জাদুল হক (গোলাপ ফুল)।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌর কমিটির ২ হাজার ৯০ জন কাউন্সিলরের গোপন ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ দুটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মো. শরীফুল আলমকে সভাপতি ও মাজহারুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ওই সময় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম উপস্থিত থাকলেও বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায় সম্মেলন। পরে তিন সপ্তাহ পর কেন্দ্র থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘বিএনপি যে একটি গণতান্ত্রিক দল, এ নির্বাচনই তার প্রমাণ। নেতা-কর্মীরা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাঁদের নেতা নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছে, সব সময় দলের নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি ভবিষ্যতেে পাশে থাকবো ইনশাল্লাহ্।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। তাঁদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে কাউন্সিলররা তাদের নেতা নির্বাচন করছেন।


















