কূটনৈতিক প্রতিবেদক.
বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিকের বিদেশ সফর মানেই প্রবাসী দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আগে যেটা স্লোগান ও কালো পতাকা প্রদর্শনে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা রূপ নিচ্ছে আরও উত্তপ্ত ঘটনাপ্রবাহে। ডিম-জুতা নিক্ষেপের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। যাতে বিদেশের মাটিতে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি।
এই অশোভন সংস্কৃতি চলে আসছে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরগুলোতে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ছিল নিয়মিত ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফরেও ঘটছে দৃশ্যপটের পুনরাবৃত্তি। বরং বিক্ষোভের ধরন পাল্টে আরও বিতর্কিত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না দেওয়া বিদেশের মাটিতে এ ধরনের বিক্ষোভের বড় কারণ। তবে এ ধরনের বিক্ষোভ শুধু দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে না, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশও সংকুচিত হয়ে আসছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল হাই জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে এ ধরনের বিক্ষোভ করা অত্যন্ত অনুচিত। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশিদের সেসব দেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে বিধি-নিষেধ তৈরি করে। গত সেপ্টেম্বরে লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গাড়ি ঘিরে ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের প্রতিবাদ করছেন তাদের বেশিরভাগই কিন্তু সেসব দেশের নাগরিক। তাদের তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু সাধারণ বাংলাদেশিরা যখন এসব দেশে যেতে চাইবেন তাদের পথ সংকুচিত হয়ে আসবে।
বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা আবদুল হাই বলেন, বাংলাদেশিদের মতো এত বাজেভাবে নিজ দেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ ভিন দেশের মাটিতে করতে দেখা যায় না। এমনকি ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা বিদেশে পাবেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, এ ধরনের আচরণ অসভ্যতা ও অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ। বিদেশের মাটিতে এ ধরনের আচরণ দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে। পাশাপাশি আমরা যে রাজনৈতিকভাবে অসহিষ্ণু- এ জিনিসটা সবার সামনে আরও পরিষ্কার করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যাওয়া এক বাংলাদেশি সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতির নামে বিভিন্ন দলের কর্মীরা যা কর্মকাণ্ড করেন, মুখের যে ভাষা ব্যবহার করেন তা বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই। এরা নিজের দেশের মানুষকে অন্য দেশের মাটিতে বসে হেয় করেন। আমার সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীও পড়ালেখা করেন। মাঝে মধ্যে এসব বিষয়ে আলাপ উঠলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

 
                    







 
                                     
                                     
                                    








