ডা. এম এ হক, পিএইচ.ডি
বর্তমানে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সকল ক্যান্সারের মধ্যে শুধুমাত্র ফুসফুসের ক্যান্সার প্রায় ২৩ শতাংশ। ফুসফুসের ক্যান্সারের আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্য সময়ের চেয়ে শীতকালে এই রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষের আক্রান্তের হার অনেক বেশি।
প্রকার: ফুসফুসের ক্যান্সার তিন ধরনের হয়। কার্সিনয়েড, নন স্মল সেল টাইপ ও স্মল সেল টাইপ। এর মধ্যে স্মল সেল টাইপ সবচেয়ে খারাপ, এটি শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
কারণসমূহ: ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান নিয়ামক। এ ছাড়াও ধূমপান, ভেজাল খাদ্য, প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ জীবনযাপন ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর সঙ্গে বংশগত কারণ ও পেশাগত কারণে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন: নিকেল, আর্সেনিক, সিলিকা ইত্যাদির সংস্পর্শও ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
লক্ষণসমূহ: সাধারণত যাদের শিশুকাল থেকেই ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা তারা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ দেখা না গেলেও রোগটি যখন চরম পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন শরীরের ওজন কমে যাওয়া; ক্রমাগত কাশি; রক্তসহ কফ ওঠা; শ্বাসকষ্ট; কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া; বুকে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা: ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হয় ‘এর ভালো কোনো চিকিৎসা নেই।’ কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিতে ফুসফুসের ক্যান্সারের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য বিকল্প চিকিৎসাসেবা থাকলে রোগীকে অযথা কষ্টদায়ক ও ঝুঁকিযুক্ত চিকিৎসা করানো কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এ বিষয়ে আরও সচেতনতার প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হোমিওপ্যাথিতে ভালো হয় একথা সকলেই জানেন। সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ক্যান্সার চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরু করার পর যদি রোগীর শারীরিক ও মানসিক উন্নতি হয় এবং পূর্বের তুলনায় ভালো বোধ করে তাহলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এই পরিবর্তন প্রথম দিকে ধীরে-ধীরে হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে স্মরণ রাখতে হবে, ক্যান্সার চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো উত্তম। আমাদের দেশে ফুসফুস ক্যান্সার চিকিৎসায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক রয়েছেন। অতএব, ফুসফুসের ক্যান্সারে আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই হচ্ছে।
সর্বোপরি, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, সমাজ, বন্ধু-বান্ধবসহ সকলের সাহায্য সহযোগিতায় একটি ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।